Untitled Document

Frequently asked Question
প্রশ্ন: মানসিক সমস্যা কি এবং কারা আক্রানত হয়?
সবাসহ্য বিষয়ে কথা আসলেই আমরা প্রধানত শারিরীক সবাসেহ্যর কথাই বেশী শুনে থাকি। মজার বিষয় হলো আমাদের সবাসহ্য সমস্যার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে ”মানসিক সবাসহ্য” যে ব্যাপারটিতে আমরা অনেকেই খুব কম জানি।

মানসিক স্বাস্থ্য হলো চিনতা্প্রক্রিয়া, মেজাজ-মর্জি ও আচরনে উল্লেখযোগ্য বিশৃংক্ষলা যা ব্যক্তির স্বচ্ছন্দ দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যহত অথবা প্রভাবিত করে। এখন পর্যনত বেশকিছু মানসিক পীড়া/অসুসহতা প্রচলিতভাবে (formally) স্বীকৃত।

অনেক মানসিক পীড়া/অসুসহতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে, অন্যান্য বেশকিছু মানসিক পীড়া/অসুস্থতা চক্রাকারে অর্থাৎ বছরের কোন একটা বিশেষ সময়ে যেমন শীতকালে হয় (e.g., seasonal affective disorder) অথবা ক্ষনসহায়ী হয় যেমন প্রসবোত্তরকালীন অবষাদ (e.g., postpartum depression)| আবার অনেকে অবষাদ, উদ্বেগ বা অন্য কোনধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগেন যা দীর্ঘসহায়ীত্ব অথবা তীব্রতার দিক থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কোন মানসিক সমস্যা বলে চিহ্নিত করা যায়না। যাঁদের স্বাসহ্য (মানসিক) সাধারনভাবে ভাল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের নিজস্ব চিনতা্প্রক্রিয়া, মেজাজ-মর্জি ও আচরনের উপর দখল/নিয়নত্রন থাকে। এধরনের ব্যক্তিরা সাধারনভাবে নিজের সম্পর্কে ভাল বোধ করেন এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। এধরনের ব্যক্তিদের মানসিক স্বাসহ্য একটি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যার ফলে যেকোন সমস্যা তাঁরা পরিসিহতির প্রেক্ষিতে মোকাবিলা করেন।

অন্যদিকে, যাঁদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তাঁদের চিনতা্প্রক্রিয়া, মেজাজ-মর্জি এবং অন্যদের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকে। এধরনের ব্যক্তিরা সামাজিক, কর্মক্ষেত্রে অথবা স্কুলে নানাবিধ সমস্যার সমমুখীন হন। এধরনের ব্যক্তিরা সাধারনভাবে পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখতেও অক্ষম হন।

প্রশ্ন: কি করে বুঝবো যে আমি মানসিক সমস্যায় ভুগছি?
ব্যক্তি ও বিদ্যমান পারিপার্শিকতার ভিত্তিতে মানসিক সমস্যার লক্ষনসমুহের ধরন, সহায়ীত্ব এবং এর তীব্রতার উপর নির্ভর করে কম বা বেশী হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই লক্ষনসমুহ খুবই সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট। যেমন, সিজফ্রেনিয়ায় আক্রানত ব্যক্তির অদৃশ্য কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া সুস্পষ্ট মানসিক সমস্যার লক্ষন।

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার লক্ষনসমুহ এতই সুক্ষ ও সু্প্ত যে তার কারন ব্যাখ্যা করা কঠিন। যেমন, প্রিয়জনের অ্প্রত্যাশিত বিয়োগে দুঃখবোধ করা হয়তো স্বাভাবিক কিন্তু সেই দুঃখবোধ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে বা ব্যক্তিকে দুর্বল করে দেয় তবে তা “অবষাদ” এর লক্ষন বলে বুঝতে হবে।

সাধারনভাবে মানসিক সমস্যার প্রচলিত লক্ষনসমুহ:
  • উৎকন্ঠা বা ভীতি (Anxiety and fear)
  • ঘুমের প্রবনতায় পরিবর্তন (Changes in sleep patterns)
  • চিনতা বা মনযোগে সমস্যা (Difficulty thinking or concentrating)
  • ক্লানিত বা প্রানশক্তির অভাব (Fatigue and loss of energy)
  • নিরুপায় বা নিরাশ বোধ (Feelings of hopelessness, helplessness)
  • ব্যাথা অনুভুতি (Generalized pain)
  • অসিহরতা ও বিরক্তি বোধ (Restlessness and irritability)
  • ক্ষুধা ও ওজনের উল্লেখযোগ্য হ্রাস (Significant change in appetite or weight)
  • বিভ্রানিত ও ভ্রম (Delusions or hallucinations)
  • আত্মহত্যার ইচ্ছা/চিনতা (Thoughts of suicide or self-destructive behaviour)
প্রশ্ন: মানসিক সমস্যা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রানত ধারনাগুলো কি?

বেশীরভাগ সময় দেখা যায় যে, “মানসিক রোগ”র বা্যপারে সামাজিক কুসঙস্কারের কারনে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনে অনেকেই অনাগ্রহী থাকেন। আমাদের মধ্যে এসব সমস্য ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নানান বিভ্রানিত রয়েছে। এরকমই কিছু ভ্রানত ধারনা হচ্ছে;
  • সামাজিকভাবে মানসিক সমস্যাকে একটি “পাগল” হয়ে যাওয়ার রোগ মনে করা হয়।
  • মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরা বিপজ্জনক।
  • কাউন্সেলিং শুধুমাত্র তাঁদেরই দরকার যাদের সিরিয়াস আবেগীয় বা মানসিক সমস্যা আছে।
  • কাউন্সেলিং হচ্ছে তাঁদের জন্য যাঁরা খুবই দুর্বল ্প্রকৃতির এবং যাদের কোন ঘাটতি আছে।
  • কাউন্সেলিং এর মুল উদ্দেশ্য হছে “উপদেশ” দেয়া।
  • কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা যায়।
  • কাউন্সেলিং করাতে চাইলে সবাই আমাকে “পাগল” ভাববে।
  • কাউন্সেলিং এ আমার ব্যক্তিগত একানত সব তথ্য সবাই জেনে যাবে।
আশার কথা এই যে, যতই দিন যাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা জনগনের মধ্যে জন্প্রিয় হয়ে উঠছে এবং যারা একবার এধরনের সেবা গ্রহন করেছেন তারাই এর সুফল সম্পর্কে অবহিত আছেন।

প্রশ্ন: মানসিক সমস্যার সমভাব্য কারনসমুহ কি?

মানসিক সমস্যার সমভাব্য অনেক কারন আছে। যেমন, অনেকে জেনেটিক বা কেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতার প্রবনতা বা ঝুঁকি নিয়েই জনমায় যা অন্যদের চাইতে তাঁদেরকে মানসিক সমস্যায় আক্রানত হওয়ার সমভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

অন্যদিকে, জনমগত বা জৈব কারন ছাড়াও অন্যান্য কারনেও মানসিক সমস্যা হতে পারে, যেমন - কোনদুঃখ-দুর্দশার অভিজ্ঞতা বা পারিপার্শিকতার চাপ ইত্যাদি। মানসিক ক্রিয়া্প্রক্রিয়ার নিয়নত্রন ও ব্যাখ্যার জন্য দায়ী হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক।

প্রশ্ন: এই কারনগুলো কিভাবে নির্ণয় করবো?

প্রধানত একজন চিকিৎসক অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীদের সাথে পর্যালোচনা করে মানসিক সমস্যা নির্ণয় করে থাকেন।

বেশীর ভাগ মানসিক সমস্যা/রোগই ্প্রচলিত পদ্ধতি যেমন, ইমেজিং টেষ্ট, রক্ত বা মুত্র পরিক্ষা ইত্যাদি দিয়ে হয়না। সাধারনভাবে মানসিক সমস্যা নির্ণয় একজন চিকিৎসক বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মানসিক সমস্যার লক্ষনগুলো পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষুরুপে পর্যবেক্ষন করেন এবং ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে ও ব্যক্তিজীবনে এর কি ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে তাও খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। একই সাথে দৈননিদন কর্মকান্ড পরিচালনায় (যেমন, অফিসে যাবার জন্য তৈরি হওয়া, বাজার করা, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি) ব্যক্তি কতটা সক্ষম তাও দেখা হয়। এর বাইরেও বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু ্প্রশ্ন করতে পারেন, যেমন -
  • ব্যক্তি কতদিন যাবৎ লক্ষনগুলো প্রদর্শন করছেন?
  • ব্যক্তির লক্ষনগুলো কতটা মারাত্মক?
  • লক্ষনগুলো ব্যক্তির কাছে পীড়াদায়ক কিনা?
  • লক্ষনগুলো কি ব্যক্তির দেননিদন স্বাভাবিক জীবনে বাধার সৃষ্টি করছে?
এছাড়াও বিভিনন মনোবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা (Psychological tests and scales) ব্যক্তির চেতন, সক্ষমতা, মনোভাব ও ব্যক্তিত্ত্ব পরিমাপের কাজে ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন: এর চিকিৎসা সমভাবনা কতটুকু?

মানসিক সমস্যা নির্ণয়ের পর সাধারনত সাইকোথেরাপী অথবা ঔষধ অথবা এ দুয়ের সমনবয়েই করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে যা প্রতিরোধ করা যায় না। তবে, কিছু কিছু লক্ষন প্রতিরোধ করা যায় বা ব্যবস্থাপনা (সামাল দেয়া) করা যায় যেমন, জীবন পরিস্থিতিতে ইতিবাচক মনোভাব রাখা, সমস্যা সমাধানের কৌশলগুলো শিখে নেয়া এবং পরিবার ও বন্ধুমহলে বিশ্বস্ত কারও সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করা।

সাইকোথেরাপীর সময়ে ব্যক্তিকে একজন মনোবিজ্ঞানী অথবা সাইকিয়াট্রিষ্ট অথবা ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীর সাথে তাঁর অবস্থা এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করা হয়। সাইকোথেরাপী এই তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত যে, কোন মনোবিজ্ঞানী অথবা সাইকিয়াট্রিষ্টর সাথে তাঁর সমস্যা ও উৎকনঠা বিষয়ে কথা বলে সে তাঁর আবেগীয় ও মানসিক স্বাস্থ্যের উননয়ন ঘটাতে পারেন। থেরাপিষ্ট তাঁকে সমস্যা সমাধানে বিভিনন উপায় এবং বাস্তবমুখী লক্ষ্য নির্ধারনে সাহায্য করতে পারেন।

চিকিৎসা সমুহ বিভিনন ধরনের হতে পারে, যেমন- ব্যক্তিপর্যায়ে থেরাপী, দলীয় থেরাপী অথবা এই দুয়ের সমন্বয়। এধরনের চিকিৎসার ফলাফল ব্যক্তির অবস্থাভেদে কয়েক স্প্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যনত স্থায়ী হতে পারে। এছাড়াও “সাপোর্ট গ্রুপ”এ অংশগ্রহনের মাধ্যমে ব্যক্তি অন্যদের সাথে তাঁর অনুভুতি আলোচনা করতে পারে। এর বাইরেও বিভিনন ধরনের ঔষধ মানসিক অসুস্থতার লক্ষনগুলোকে কমাতে পারে যেমন - anti-anxiety drugs, antidepressants, antipsychotics, mood stabilizers and central nervous system (CNS) stimulants ইত্যাদি। তবে মনে রাখতে হবে যে, সব ধরনের ঔষধ সবার জন্য সমানভাবে প্রজোয্য নয়, যেমন - antidepressants কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা/ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এধরনের ঔষধ ব্যবহারকারিদের তাই খুব নিবীড় পর্যবেক্ষনে রাখতে হয়। আবার যাঁরা গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদেরকে এমন কিছু ঔষধ যেমন - (e.g., selective serotonin reuptake inhibitors) দেয়া যাবেনা যা গর্ভজাত বা নবজাতকের কোন ক্ষতির কারন হতে পারে। তবে ব্যক্তিকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে যেকোন ঔষধ শুরু বা পরিত্যাগ করতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই তা করবেন।

আবার তীব্র অবষাদ এর চিকিৎসায় (ECT) ইলেকিট্রক শকের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সিজার, এছাড়া treatment-resistant depression চিকিৎসায় এবং non-invasive পদ্ধতি হিসেবে “ভেগাস” নার্ভ ষ্টিমুলেশন ও (TMS) পদ্ধতি দিনদিন জন্প্রিয় হয়ে উঠছে।

প্রশ্ন: চিকিৎসার কোন বিকল্প আছে কি?

মানসিক সমস্য হলেই যে তার চিকিৎসা প্রয়োজন এমনটি নয়, এর প্রতিরোধেরও নানা উপায় রয়েছে। তবে, অনেক মানসিক সমস্যা রয়েছে যা প্রতিরোধে করা যায়না। যেমন, “অ্যালজাইমার ডিজিজ” প্রতিরোধের উপায় নেই। তবে অনেক মানসিক সমস্যাই কিছুকিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে হ্রাস/কমানো বা সামাল দেয়া যায়। এধরনের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে জীবন পরিস্থিতিতে ইতিবাচক মনোভাব রাখা, জীবনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা সমাধানের কৌশলগুলো শিখে নেয়া, চিকিৎসকের পরামর্শমত ঔযধ গ্রহন করা এবং পরিবার, বন্ধুমহলে বিশ্বস্ত কারও সাথে ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করা। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া, অনুশীলন করা ও সঠিক পরিমান বিশ্রাম সুস্থ থাকার জন্য জরুরী।

আবার কোনকোন ক্ষেত্রে পদক্ষেপগুলো শুধুমাত্র লক্ষনসমুহ হ্রাস/কমানোর বাইরেও প্রকৃতপক্ষে সমস্যা প্রতিরোধেই সাহায্য করতে পারে। যেমন- ব্যক্তি যদি কোন ট্রাজিক দুর্ঘটনার পরপরই নিকটজনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন তবে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Untitled Document
© All rights reserved
House 34, Road 9A, Dhanmondi, Dhaka-1209, Bangladesh
Phone: +8801715012248, Email: info@nirnoy-counseling-tr-bd.org